Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

সাম্প্রতিক কর্মকান্ড

সাম্প্রতিক কর্মকান্ড:-

০১.সমবায় নীতিতে সমবায় বান্ধব কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধকরণ ও নিবন্ধন প্রদান;

০২.নিরীক্ষা, পরিদর্শন ও তদারকির মাধ্যমে সমবায় সমিতিগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা;

০৩.সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রশিক্ষণ/উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা;

০৪.প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমবায়ীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তা সৃজনে সহায়তা করা;

০৫.সমবায় নেটওয়ার্কিং জোরদার করার লক্ষ্যে সমবায় মূল্যবোধের প্রচার, প্রকাশনা, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান;

০৬.পূঁজি গঠন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা;

০৭.গ্রামীণ মহিলা ও সাধারণ জনগোষ্ঠির ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমবায় ভিত্তিক প্রকল্প ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন;

০৮.সমবায় পন্য ব্রান্ডিং ও বাজার সংযোগ প্রতিষ্ঠায় সমবায়ীদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করা;

০৯.অভিলক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় নীতিমালা,উন্নয়ন কর্মসূচী এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমবায় অধিদপ্তরকে সহযোগিতা করা।



সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে মত বিনিময় সভার কার্যবিবরণী

স্থান: অফিসার্স ক্লাব, ডুমুরিয়া, খুলনা।

তারিখ: ০৮.০৫.২০২৩ খ্রি.

সময়: সকাল ১১.০০ টা।

 উপস্থিতির তালিকা: তালিকা সংযুক্ত।

অদ্যকার সভা জনাব শরীফ আসিফ রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডুমুরিয়া, খুলনা মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে সভা শুরু করেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব এজাজ আহমেদ, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, ডুমুরিয়া,খুলনা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব সৈয়দ জসীম উদ্দিন, জেলা সমবায় কর্মকর্তা, খুলনা এবং উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা, জনাব সরদার জাহিদুর রহমান।

সভায় উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জনাব সরদার জাহিদুর রহমান বলেন- খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু করোনা অতিমারি পরবর্তী সময় হতে সমিতির তহবিল ঘাটতি ও আশানুরূপ ঋণ আদায় না হওয়ায় এবং একই সাথে অধিকাংশ সদস্য আমানত ফেরত চাওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত সমিতিগুলো তহবিল সংকটের মুখোমুখি হয়েছে এবং সমিতির কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এই সংকটময় অবস্থা কাটিয়ে সমিতিগুলোকে আরো উজ্জীবিত ও গতিশীল করার লক্ষ্যে এই মত বিনিময় সভার আয়োজন। এরপর তিনি সকলকে এই সভাকে সফল করার আহ্বান জানান।

এরপর জেলা সমবায় কর্মকর্তা, খুলনা মহোদয় তাঁর বক্তব্যে সমবায় সমিতি পরিচালনায় সমবায় সমিতি আইন, বিধিমালা, এবং সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মহোদয় কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলার ও পরিপত্র অনুসরণ না করে সমিতি পরিচালনার কারণে সমিতির বর্তমান এই সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। এ অবস্থা হতে উত্তোরণের লক্ষ্যে তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে আইন বিধির ও পরিপত্র আদেশ-নির্দেশ অনুসারে তৈরিকৃত ডকুমেন্ট স্লাইড শো আকারে প্রজেক্টরে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। জেলা সমবায় কর্মকর্তা মহোদয়ের বক্তব্যের উল্লেখ্যযোগ্য দিকসমূহ:

বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়:

তিনি বলেন সমবায় সমিতির অডিট প্রতিবেদন, পরিদর্শন প্রতিবেদন ও তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ সংশোধন ২০২০ এর বিধি ৪৬(২) অনুযয়ী নিবন্ধকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ না করে সমিতি অনেক অলাভজনক, ঝুঁকিপূর্ণ ও অদূরদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এক্ষেত্রে তিনি সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ সংশোধন ২০২০ এর বিধি ৪৬(২) মোতাবেক প্রাথমিক সমিতির ক্ষেত্রে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা, কেন্দ্রীয় ও জাতীয় সমিতির ক্ষেত্রে বার্ষিক ১০ লক্ষ টাকার অধিক পরিমাণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিবন্ধকের পূর্বানুমোদন গ্রহণের জন্য বলেন।

সাধারণ সভা সংক্রান্তঃ

ডুমুরিয়া উপজেলায় যে সব সমবায় সমিতি প্রকল্প গ্রহণ করেছে তা পরিদর্শন কালে দেখা যায় সমিতির বার্ষিক বাজেট, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রস্তাব বাস্তবতার আলোকে যাচাইপূর্বক অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি। সমিতির বার্ষিক বাজেট, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রস্তাব বাস্তবতার আলোকে যাচাইপূর্বক অনুমোদন না করার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ সংশোধন ২০২০ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী সাধারণ সভা সমিতির কার্যক্রম বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রম পরীক্ষা করবে এবং সমিতির বার্ষিক বাজেট, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রস্তাব বাস্তবতার আলোকে যাচাইপূর্বক অনুমোদন করবে। সমিতির স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা সাধারণ সভার থাকবে মর্মে জানান।

অসদস্যের নিকট থেকে আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদান সংক্রান্ত:

সমিতির বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় সমবায় সমবায় সমিতিসমূহ সদস্য  ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আমানত গ্রহণ বা ঋণ প্রদান করে না। তবে নামে মাত্র ১০০(একশত) টাকা শেয়ার বিক্রয় করে সদস্য করা হয়েছে। নামমাত্র সদস্যের নিকট ঋণ প্রদানের ফলে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সমবায় সমিতি আইন,২০০১ (সংশোধন ২০০২ ও ২০১৩) এর ধারা ২৬(১) অনুয়াযী বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ব্যতীত কোন সমবায় সমিতি উহার সদস্য ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে আমানত গ্রহণ বা ঋণ প্রদান করিতে পারবে না মর্মে  উল্লেখ করেন।

ঋণ মঞ্জুরের সীমাবদ্ধতা:

ডুমুরিয়া উপজেলার অধিকাংশ সমবায় সমিতি ১০০ (একশত) টাকার একটি শেয়ার বিক্রয় করে এবং ১০০(একশত) টাকার সঞ্চয় জমা রেখে এক জন ব্যক্তি কে সদস্য করে পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের ৪০(চল্লিশ) গুণের  অধিক পরিমাণ অর্থ ঋণ প্রদান করে। পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের ৪০(চল্লিশ) গুণের অধিক পরিমাণ অর্থ ঋণ প্রদান করার ফলে ঋণ খেলাপীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথে সাথে সমিতির মূলধনের ঘাটতি হচ্ছে। এ বিষয়ে সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ সংশোধন ২০২০ এর বিধি ৭৪(১) অনুযায়ী শেয়ার মূলধনের ৪০(চল্লিশ) গুণের  অধিক পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসাবে প্রদান না করার আহ্বান জানান।

শতভাগ আমানত ঋণ/বিনিয়েগে প্রদান:

ডুমুরিয়া উপজেলায় ৭৫% সমবায় সমিতির ব্যাংকে হিসাব খোলা নেই। যে সকল সমিতির ব্যাংক হিসাব খোলা আছে তাদের কেউ ব্যাংকে তারল্য হিসাবে টাকা জমা রাখে না। এমন কি ব্যাংকের মাধ্যমে কোন লেনদেন করেন না। সমিতির সদস্যদের নিকট হতে গৃহীত সঞ্চয় ও আমানতের জমাকৃত মোট টাকা ১০০% ঋণ/ বিনিয়োগ কাজে ব্যবহার করে থাকেন। যে কারণে দুর্যোগকালীন সদস্যদের টাকা ফেরত দিতে পারে না। শতভাগ আমানত বিনিয়োগে প্রদানের ফলে তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে যে কারণে আমানত ফেরত প্রদানের ক্ষেত্রে টাকার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। নিবন্ধক মহোদয়ের বিগত ১৭.০৪.২০১৩ খ্রি. তারিখের ৪৭.৬১.০০০০.০২৭.২৯.০০৮/১৩ ব্যাংক, বীমা-১৮৩নং স্মারক মূলে জারিকৃত পরিপত্র অনুসারে সঞ্চয় ও আমানতের টাকা কোন তফসিলি ব্যাংক বা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকে জমা রাখতে হবে এবং জমাকৃত মোট আমানতের সর্বোচ্চ ৮০% ঋণ/বিনিয়োগ কাজে ব্যবহার করা যাবে। সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ এর বিধি ৬৭ শর্ত অনুযায়ী অবশিষ্ট ২০% আমানত তারল্য হিসাবে ব্যাংকে জমা রাখতে হবে মর্মে তিনি জানান।

তারল্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত:

          ডুমুরিয়া উপজেলার প্রায় সকল সমবায় সমিতি বিভিন্ন প্রকার আমানত গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু আমানতের অর্থ সমিতি কর্তৃপক্ষ এমনভাবে সংরক্ষণ করেন যা অতি সহজেই নগদ অর্থে রূপান্ত করা যায় না। যে কারণে আপদকালীন সময় সমিতি কর্তৃপক্ষ সদস্যদের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। সমিতির ব্যাংক হিসাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ তারল্য সংরক্ষণ না করার কারণে সদস্যরা তাদের সঞ্চয়ের টাকা সময়মত ফেরত পাচ্ছে না। ফলে সমিতির সমিতির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ সমস্য থেকে পরিত্রাণের জন্য সমিতির তারল্য (ফ্লুইড রিসোর্সেস বা লিকুইড কভার) সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ (সংশোধন ২০২০) এর ৬৭(১) বিধি অনুসারে সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক হিসেবে উল্লেখ করেন।

এজেন্সি নিয়োগ/ইনসেনটিভ প্রদান:

অনেক সমিতি আমানত সংগ্রহ কাজের জন্য এজেন্সি নিয়োগ করে থাকেন এবং এ কাজের জন্য সমিতির কর্মচারী বা সদস্যকে ইনসেনটিভ প্রদান করে। যে কারণে সমিতিগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নিবন্ধক মহোদয়ের বিগত ১৭.০৪.২০১৩ খ্রি. তারিখের ৪৭.৬১.০০০০.০২৭.২৯.০০৮/১৩ ব্যাংক, বীমা-১৮৩নং স্মারক মূলে জারিকৃত পরিপত্র অনুসারে এ ধরনের কাজের জন্য কোন কর্মচারীকে কোন ইনসেনটিভ প্রদান না করার জন্য বলেন।

সম্ভাবনা যাচাই না করে জমি বা অন্য কোন স্থায়ী সম্পদ ক্রয়:

সমবায় সমিতিগুলোর অডিটপ্রতিবেদন, পরিদর্শন প্রতিবেদন ও তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গিয়াছে, প্রায় সব সমবায় সমিতি সদস্যদের নিকট হতে সংগৃহীত সঞ্চয় ও আমানতের টাকা দিয়ে জমি ক্রয় বা অন্য কোন স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করে থাকে। সে পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির কার্যকারী মূলধন বসে যায় এবং সমিতির আয় কমে যায়। ঘাটতি টাকার মুনাফা প্রদান করতে গিয়ে সমিতিগুলোর মূলধন অবক্ষয় হয়। তৎপরিপ্রেক্ষিতে অনেক সমবায় সমিতি আর্থিকভাবে দেউলিয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। শর্ত ভঙ্গ করে কোন জমি বা অন্য কোন স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করার ফলে নগদ অর্থের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। যে কারণে সমবায় সমিতিসমূহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। নিবন্ধক মহোদয়ের বিগত ১৭/০৪/১৩ খ্রিঃ তারিখের ৪৭.৬১.০০০০.০২৭.২৯.০০৮/১৩ ব্যাংক, বীমা-১৮৩ নং- স্মারক মূলে জারীকৃত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ২(৭) এ বর্ণিত কোন সমবায় সমিতি এর সদস্যদের নিকট হতে সংগৃহীত সঞ্চয় ও আমানতের টাকা দিয়ে জমি ক্রয় বা অন্য কোন স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করতে পারবে না। পরিশোধিত শেয়ার মূলধন, সংরক্ষিত তহবিল ও মুনাফা হতে সৃষ্ট অন্যান্য তহবিলের সমন্বয়ে গঠিত নিজস্ব মূলধনের সর্বোচ্চ ২০% টাকা জমি ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে মর্মে উল্লেখ করেন।

বিনিয়োগ আদায়:

অনেক সমবায় সমিতি বিনিয়োগের উপর ধার্যকৃত সর্ভিস চার্জ আদায় না হলেও মূলধন বা আমানতের আসল টাকার অবক্ষয় ঘটিয়ে সঞ্চয় ও আমানতের উপর ধার্যকৃত মুনাফা প্রদান করে থাকেন। বিনিয়োগের উপর ধার্যকৃত সার্ভিস চার্জ ও বিনিয়োগের আসল আদায় না করে সঞ্চয় ও আমানতের উপর মুনাফা প্রদান করার ফলে সমিতির মূলধন অবক্ষয় হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন- নিবন্ধক মহোদয়ের বিগত ১৭/০৪/১৩ খ্রিঃ তারিখের ৪৭.৬১.০০০০.০২৭.২৯.০০৮/১৩ ব্যাংক, বীমা-১৮৩ নং- স্মারক মূলে জারীকৃত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ২(৬) এ বর্ণিত বিনিয়োগের উপর ধার্যকৃত সর্ভিস চার্জ আদায় না হওয়া পর্যন্ত মূলধন বা আমানতের আসল টাকার অবক্ষয় ঘটিয়ে সঞ্চয় ও আমানতের উপর ধার্যকৃত মুনাফা প্রদান করা যাবে না।

 

ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুরুপ কার্যক্রম পরিচালনা:

ডুমুরিয়া উপজেলায় নিরীক্ষাকালে দেখা যায় যে, সমিতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুরুপ  কার্যক্রম যেমন এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি জাতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সমিতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুরুপ কার্যক্রম; যেমন- এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রের উপর অধিক পরিমাণ মুনাফা প্রদানের ফলে সমিতিগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সমবায় সমিতি আইন,২০০১ (সংশোধন ২০০২ ও ২০১৩) এর ধারা ২৩খ এর ধারা (১) মোতাবেক কোন সমবায় সমিতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেখে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করিতে পরিবে না। (২) কোন ব্যক্তি এই ধারার কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড বা অন্যূন ১০(দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উবয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন মর্মে বলেন।

শেয়ার মূলধন ও রিজার্ভ ফান্ড:

অধিকাংশ সমবায় সমিতি বর্ণিত ধারা লঙ্ঘন করে ২০(বিশ) গুণের বেশি অর্থ উক্ত সময়ে ঋণ গ্রহণ করছেন। পরিশোধিত শেয়ার মূলধন ও রিজার্ভ ফান্ডের যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে তার ২০ গুণের বেশি সমিতি কর্তৃপক্ষ ঋণ গ্রহণ করার ফলে ধীরে ধীরে সমিতিগুলো ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ সংশোধন ২০২০ এর বিধি ৬৬(১) অনুযায়ী  কোন সীমিত দায়বিশিষ্ট সমবায় সমিতি উহার পরিশোধিত শেয়ার মূলধন এবং রিজার্ভ ফান্ডের মধ্যে সমিতির বাহিরে পৃথকভাবে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা রয়েছে তার সর্বোচ্চ ২০(বিশ) গুণের বেশি অর্থ উক্ত সময়ে ঋণ গ্রহণ করিতে পারিবে না।

বিনিয়োগ বণ্টন:

বর্তমানে সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃপক্ষ ঋণের উপর ধার্যকৃত সুদ আদায় না হলেও মূলধন বা আমানতের আসল টাকার অবক্ষয় ঘটিয়ে সঞ্চয় ও আমানতের উপর ধার্যকৃত মুনাফা প্রদান করে থাকেন। লোকসান সমন্বয়, নিরীক্ষা ফি ও সমবায় উন্নয়ন তহবিলে বকেয়া পরিশোধ না করে সদস্যদের মধ্যে মুনাফা প্রদান করার ফলে সমিতিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ সংশোধন ২০২০ এর বিধি ৮৬(২) মোতাবেক লোকসান সমন্বয়, নিরীক্ষা ফি ও সমবায় উন্নয়ন তহবিলের বকেয়া দাবি পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ভবিষ্যৎ মুনাফা সদস্য বা কর্মচারীগণের মধ্যে বণ্টন করা যাবে না।

লভ্যাংশ বণ্টন:

সমবায় সমিতিগুলোর অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অধিকাংশ সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুসরণ না করে ইচ্ছামত লভ্যাংশ বিতরণ করে থাকে। লভ্যাংশ বণ্টন কিভাবে করতে হয় সে বিষয়ে ৯০%সমবায় সমিতির অজানা বা কর্তৃপক্ষ উদাসীন। লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে সমিতি কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকার কারণে সমিতির মূলধন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ (সংশোধন ২০২০) এর ৮৩(১) বিধি অনুযায়ী কোন সমবায় সমিতি উহার সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক শেয়ার মূলধনের ৭৫% লভ্যাংশ প্রদান করতে পারবে মর্মে জানান।

সম্পদের উপর অবচয় ধার্য সংক্রান্ত:

অধিকাংশ সমবায় সমিতি সম্পদের মূল্যের উপর অবচয় ধার্য করে না। অবচয় ধার্য না করার কারণে সম্পদের প্রকৃত বা ক্রয়মূল্য প্রদর্শিত হচ্ছে। পরবর্তীতে উক্ত সম্পদ বিনষ্ট হলে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। এ অবস্থা নিরসনে হিসাব ম্যানিউয়্যাল অনুযায়ী স্ট্রেইট লাইন পদ্ধতি অবলম্বন করে মোট সম্পদের (ভূমি ব্যতীত) ব্যবহারিক জীবনের মধ্যে ঐ সম্পদের মূল্যের উপর অবচয় দার্য করে নিঃশেষ করতে হবে।

ঋণ রি-নিউ সিস্টেম:

(ক) পেপার ট্রানজেকশন এর মাধ্যমে লাভ ধার্য করে কৃত্রিমভাবে সমিতির নিট লাভ সৃষ্টি করা হয়। ঋণের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আসল বা সুদ কোনটি আদায় না করে সুদকে আসলে রূপান্তর করে পাওনা ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। (খ) বছরের পর বছর শুধুমাত্র ২% বা ৩% হারে সুদ আদায় করা হয়। আসল টাকা আদায় করা হয় না। এ কারণে সদস্যদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে এবং সমিতির প্রতি সদস্যরা আস্থা হারিয়ে ফেলছে। সমবায় সমিতি বধিমিালা, ২০০৪ সংশোধন ২০২০ এর বিধি ৯৪ এবং ৯৫ অনুযায়ী সন্দহেজনক ঋণ ও কু-ঋণ গণ্য করার জন্য বলেন।   

নিরীক্ষা সংশোধনী প্রতিবেদন:

সমবায় সমিতি গুলোর অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় অধিকাংশ সমিতির কর্তৃপক্ষ অডিট প্রতিবেদনে উল্লিখিত দোষত্রুটি ও অনিয়মসমূহ পড়ে না। যে কারণে অডিট প্রতিবেদনে উল্লিখিত দোষত্রুটি ও অনিয়মসমূহের সংশোধনী প্রতিবেদন নিবন্ধক বরাবর দাখিল করে না। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লিখিত দোষত্রুটি ও অনিয়মসমূহ সংশোধন করা না হলে নিবন্ধক/জেলা সমবায় কর্মকর্তা বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ভেঙে দিতে পারেন। অডিট প্রতিবেদনে উল্লিখিত দোষত্রুটি ও অনিয়মসমূহ সমিতি কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ না পড়ার কারণে সমিতিতে যে দোষত্রুটি ও অনিয়ম রয়েছে তা বহাল থেকে যাচ্ছে। যে কারণে সমিতিগুলি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। সমবায় সমিতি আইন,২০০১ (সংশোধন ২০০২ ও ২০১৩) এর ধারা ৪৭(১) মোতাবেক নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর প্রাথমিক সমবায় সমিতি ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে উক্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত দোষত্রুটি ও অনিয়মসমূহ সংশোধন করিবে এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে নিবন্ধককে অবহিত করার বিষয়ে জানান।

এরপর তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে উল্লিখিত সমবায় সমিতি আইন এর ধারা, সমবায় সমিতি বিধিমালার বিধিসমূহ এবং নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মহোদয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র, আদেশ-নির্দেশ সার্কুলার অনুসরণপূর্বক সমিতির কার্য পরিচালনার আহ্বান জানান।

সভায় উপস্থিত সমবায়ীবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে সমবায় হতে প্রভাবশালী ও বিত্তশালী ব্যক্তি অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার এবং সমবায় বিভাগের সাহায্য-সহযোগিতা করা, আমানত জমাকারীদের আমানত ফেরত প্রদান এবং ঋণ রি-নিউ বন্ধকরণসহ সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা অনুসারে সমিতি পরিচালনার উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। সভায় উপস্থিত জনতা আদর্শ গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রিন্সিপাল অফিসার জনাব এস এম গোলাম কুদ্দুস এ ধরনের মত বিনিময় সভা ৩ (তিন) মাস পরপর অনুষ্ঠানের জন্য মতামত ব্যক্ত করেন এবং জেলা সমবায় কর্মকর্তা, খুলনা মহোদয় কর্তৃক উপস্থাপিত বক্তব্য অনুসারে সমিতি পরিচালনার জন্য উপস্থিত সমবায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সভার প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব এজাজ আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন- অনেক সমিতি আছে যাঁরা বহু কষ্ট সাধন করে সমিতি গঠন করেছিল পরবর্তীতে তাঁরা সমিতির ব্যবস্থাপনায় না থাকার ফলে সমিতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সমিতি গুলোকে সমবায় দপ্তর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সমবায় দিবস বা অন্য কোন কারণে পুরস্কৃত করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সমিতিগুলো এই পুরস্কারের ক্রেস্ট বা সম্মাননা প্রচার করে মানুষকে প্রতারিত করছে। তিনি আরও বলেন সমবায় বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন এবং সমিতির নেতৃবৃন্দ সমিল্লিতভাবে ডুমুরিয়া উপজেলার সমবায়ের সুনাম বৃদ্ধি করতে হবে। সমবায়ীদের সাথে থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার সমবায় সমিতির অবস্থান সুদৃঢ় করা এবং মজবুত ভিত তৈরি করার জন্য তাঁর সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় জনাব শরীফ আসিফ রহমান তাঁর বক্তব্যে উপজেলা সমবায় দপ্তরকে সমিতি পরিচালনার প্রতি নজরদারি বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সমিতিগুলোকে বিদ্যমান সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা কঠোরভাবে মেনে চলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আইন ভঙ্গ করে সমিতি পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে উল্লেখ করেণ। এছাড়া সমবায় সমিতি পরিচালনায় যে কোন সমস্যা সমাধানে তাদের পাশে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে ডুমুরিয়া উপজেলার সমবায় কর্মকাণ্ড ফলপ্রসু ও সমৃদ্ধকরণের উপর জোর দেন।

অতঃপর সভায় অন্যকোন আলোচনা না থাকায় সভাপতি মহোদয় সভায় উপস্থিত সকল সমবায়ী, অতিথিবৃন্দ এবং অন্যান্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

তারিখ: ০৮.০৫.২০২৩ খ্রি.

                                                                                                                                                                                        স্বা/-

সভাপতি

উপজেলা নির্বাহী অফিসার

ডুমুরিয়া, খুলনা।

স্মারক নং-                                                                                                                                   তারিখ-

            অবগতি ও মত বিনিময় সভার সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে সমিতিতে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়ে অনুলিপি প্রেরণ করা হল:

১.   জনাব ---------------------------------------------------- সভাপতি/সম্পাদক,      ----------------------------------------------- সমবায় সমিতি লিঃ, ----------------------------------- ডুমুরিয়া, খুলনা।

২.   সভাপতি, ডুমুরিয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ, থুকড়া, ডুমুরিয়া, খুলনা।

৩.   উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা, ডুমুরিয়া, খুলনা।

৪.   উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ডুমুরিয়া, খুলনা।

৫.   উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, ডুমুরিয়া, খুলনা।

৬.   জেলা সমবায় কর্মকর্তা, খুলনা।

৭.   বিভাগীয় যুগ্ম-নিবন্ধক, বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়, খুলনা।

সভাপতি

উপজেলা নির্বাহী অফিসার

ডুমুরিয়া, খুলনা।